‘লুইজালে’ মেঠো জীবনের ধ্বনিময় প্রক্ষেপণ
——————————–
কবি হবার অভিপ্রায়-ই নেই, অথচ অব্যর্থ শব্দ শিকারি। নিখুঁত অভিক্ষেপ। তীক্ষ্ণ সম্মোহন শক্তি। আদিম জীবনাচারকে সভ্যতার অন্বয়ী প্রজ্ঞায় বিপুল ঐশ্বর্যে মহিমান্বিত করেছেন তরুণ কবি মাহমুদ নোমান। তাঁর প্রথম প্রকাশিত ‘লুইজালে’ কবিতার বইটি সেই উপলব্ধির বৃত্তেই নির্মিত এবং নির্ণীত।
‘লুইজালে’ মেঠো জীবনের প্রতিধ্বনিতেই জারিত স্বয়ংক্রিয় অভীপ্সায় মুদ্রিত প্রক্ষেপণ। প্রতিটি শব্দের মধ্যেই পীড়িত দলিত শোষিত নির্যাতিত জীবনের উল্লাস ও অবদমন, আনন্দ ও দুঃখ,বিপন্নতা ও বৈদগ্ধতা অতি সূক্ষ্ম বুননে মর্মরিত হয়েছে। প্রকৃতির সঙ্গে জীবন মিশে গিয়ে টুকরো টুকরো দৃশ্যগুলি অনুভূতির তীব্রতা পেয়েছে। শব্দ ও ভাষা ব্যবহারেও মাটির কাছের জীবনকেই নির্দেশ করেছেন। কৃষাণির ডেকচিতে ফুটে ওঠা সাদা ভাতের ঘ্রাণ মুগ্ধ ও স্বপ্নাতুর ঠিকানার খোঁজ করেছে। বারোমাসি পিয়াসি দুঃখে ধ্যানমগ্নতায় এবং ওযুতে সদগতি পেয়েছে। আশ্চর্য শব্দের ব্যবহার: ‘কার্পু মাছের ঠোঁটে হারামি শীত’, ‘লিলুয়া বাতাসে ডগমগে দাবনার ফিসফিসানি’, ‘লোবানের ধোঁয়ায় বৈরাগী কোকিলের খুতবা’, ‘জিন্দা প্রেমিকের মাজার’ পড়তে পড়তে আশ্চর্য হয়ে যাই। প্রচলিত কথনরীতির এমন প্রয়োগে এবং বর্ণনায় জীবনের শিহরণগুলি যে রসায়নের আমদানি করে তাতে কবিতা এক ভিন্ন দিগন্তের দিকে নিয়ে যায়। যেখানে যৌনতা এবং আল্লাহ, কান্না এবং হাসি, দুঃখ এবং আগরবাতির জিকির অভিভূত করে। মেটাফোর অলংকার প্রয়োগ হলেও মেটাফিজিকস এর প্রভাবও খুঁজে পাই। প্রকৃতি স্বয়ংক্রিয় প্রবৃত্তির আধার হয়ে ওঠে। ফরাসি নবজাগরণের অন্যতম প্রভাবশালী লেখক মিশেল ডি মন্টেইন বলেছেন:
“I study myself more than any other subject. That is my metaphysics, that is my physics.”
Michel de Montaigne
অর্থাৎ আমি অন্য যেকোনো বিষয়ের চেয়ে নিজেকে বেশি অধ্যয়ন করি। এটাই আমার অধিবিদ্যা, এটাই আমার পদার্থবিজ্ঞান।
মাহমুদ নোমানও নিজেকেই অধ্যয়ন করেছেন আর মানব রসায়নের জারকে তাঁর অধিবিদ্যার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।
লুইজালে: মাহমুদ নোমান, দেয়াঙ পাবলিকেশন, ঢাকা, দাম: 175 টাকা।
আলোচক : তৈমুর খান
#sahityashruti
0 Comments