সাত বছরের একরত্তি মেয়ে টুম্পা কে রেখে মারা গেলেন অপরাজিতার স্বামী।তখন অপরাজিতার বয়স মাত্র উনত্রিশ বছর।
আজ তার অফিশে জয়েনিং ।হ্যাঁ স্বামীর চাকুরি টাই পেয়ে ছিল সে। একটা হালকা রঙের শাড়ি ও কালো ব্লাউজ দিয়ে পরা মলিন মুখে অফিসে প্রবেশ অপরাজিতার ।ছিপছিপে গড়ন ফরসা রঙ ভারী মিষ্টি।
দেখে কলেজ ছাত্রী বলেই মনে হয় তাকে ।
সদ্য বিধবা অপরাজিতা চাকুরি তে জয়েনের প্রথম দিন চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি তার স্বামীর সহকর্মীরা।
মেয়ে কে বড় করে তুলতে চাকরি করা ছাড়া উপায় কি?
তাই ধীরে ধীরে অন্তরের ঘা শুকোনোর চেষ্টা করে রোজ অফিস যাওয়া টা সড়গড় করে ফেলে সে।
অপরাজিতাকে খুব ভালো লাগে ঐ অফিসেরই এক যুবকের। বিধবা সঙ্গে এক সন্তানের জননীকে আপন করে নিতে চেষ্টা করে একই অফিসের কর্মরত যুবক অভিরুপের।ফরসা সাহেবের মতো দেখতে দুটিতে বেশ মানানসই।
একে অপরের বন্ধু হয়ে ওঠে তারা।
অফিশে আড্ডা মারা ফুচকা খাওয়া।রবিবারের বিকেলে দেখা করা ভীষণ ভালোলাগা ।অভিরূপ – অভি,অপরাজিতা অপু তে পরিনত হল পরস্পরের কাছে। এমনি ভাবেই ভালোলাগা পরিনত হল ভালোবাসায় শেষে বিয়ে।আবারো সিন্দুর উঠল অপরাজিতার মাথায়।লাল টুকটুকে ভীষণ মিষ্টি লাগে দেখতে ।
অপুর মেয়ে টুম্পা কে ও আপন করে নিল অভি।বাবা হতেই তাকে আইনিভাবে দত্তক নিল।
বেশ সুখের সংসার।
এই ভাবেই চলতে চলতে অপু অনুভব করে সে আবারো মা হতে চলেছে । অভি ভীষণ খুশি হলেও যেন আকাশ ভেঙে পড়ে অপু মাথায় ।নিজের সন্তানকে পেয়ে টুম্পার প্রতি ভালোবাসা কমে যেতে পারে অথবা টুম্পার অধিকারে ভাগ বসাতে পারে এই আশঙ্কায় চোখের ঘুম কেড়ে নেয় অপরাজিতার।
এই আশঙ্কার অবসান ঘটাতেই নার্সিং হোমে গিয়ে ডাক্তার কে টাকা দিয়ে সমস্যার সমাধান করে এবং ভবিষ্যতে এই বিপদের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তাই নিজের গর্ভাশয় কেটে বাদ দিয়ে দেয় অপরাজিতা ।
অভিরূপ কে জানানো হল মা হলে প্রাণ সংশয় হতে পারে অপুর।
প্রাণপ্রিয় অপুর প্রাণের চেয়ে দামী কিছু ছিল না অভির তাই পৃথিবীতে নিজ রক্তের সন্তান সুখের কথা আর ভাবতেও পারল না সে। ভালোভাবেই চলে যাচ্ছিল দিন ধীরে ধীরে টুম্পা ও বড় হতে লাগল।কিন্তু টুম্পা বড় হয়েও যেন বড় হল না। ডাক্তার এর কাছে জানতে পারা গেল টুম্পা কখনো মা হতে পারবে না।তবুও বিয়ে করল টুম্পা বাবা মায়ের অমতে নিজের পছন্দ করা ছেলেকে।
তা নিয়েও ভীষণ অশান্তি কারণ ছেলেটি পুরোপুরি বেকার ।অভিরূপ অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে টুম্পা কে একটি সরকারি চাকরি তে প্রতিষ্ঠিত করে দিলে অশান্তি কিছুটা প্রশমিত হয়।
কিন্তু একটা অশান্তি রয়েই গেল টুম্পা মা হওয়ার বাসনা।উপায় না দেখে দত্তক নেওয়ার পরিকল্পনা করে টুম্পা ।
এদিকে অপরাজিতার বুকের ব্যথা টা যেন বাড়তেই থাকে ডাক্তারএর সন্দেহ ক্যান্সার ।সেটাই সত্যি হল।অভিরূপের মাথায় যেন বজ্রপাত হল।পিতৃসুখ থেকে বঞ্চিত করলেও সুগার পেসেন্ট অভিরূপের শ্রুশুষা র কোন ত্রুটি রাখতো না
অপরাজিতা ।বাইরের সবরকম কাজে পটু হলেও এক কাপ চা খেতেও অপুর ওপর নির্ভরশীল ছিল অভি।মুখের কাছে খাবার তুলে না দিলে খেতেই পারত না অভি।
ভগবান যেন সেই খাবারের থাবা বসিয়ে দিলেন।মারা গেল অপরাজিতা ।মারা যাওয়ার আগেই অবশ্য অভিরূপের নামে থাকা সব কিছু মেয়ে টুম্পা র নামে করে যেতে পারে অপু।
পৃথিবীতে সম্পূর্ণ একা হয়ে গেল অভি।
টুম্পা তার দত্তক নেওয়া কন্যা কে নিয়ে ভরা সংসারে মেতে ওঠে।অভিরূপ যেন বোঝা ।
সমস্ত কিছু দিয়ে সর্বস্বান্ত অভিরূপ বৃদ্ধাশ্রমের খোঁজ করতে থাকল কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গেছে ততদিনে কারণ শয্যাশায়ী পেসেন্ট দের বৃদ্ধাশ্রমে ও ঠাঁই নেই।
অগত্যা বোঝা হয়ে থাকতে থাকতে নির্যাতিত অভিরূপ আজ আকাশের তারা হয়ে মুক্তি লাভ করল।
টুম্পার দত্তক নেওয়া বছক চারেকের মেয়ের কথা দাদু মরে ভালো হল রোজ রোজ যা খরচ হচ্ছিল মায়ের ।
বলা বাহুল্য অভিরূপ কিন্তু মোটা অঙ্কের পেনশন পেত।
অভিরূপের আত্মার শান্তি কামনা করি।
অভিরূপ কতটা সুখ পেল জীবনে?
অভিরূপের আত্মত্যাগের দাম কে দেবে??
#sahityashruti
0 Comments