তুমি চলে গেছো // সীমা চক্রবর্তী
যাবার সময় বলেছিলে
তুমি মোর দু'টি হাত ধরে
" নিও তুমি খোঁজ,
রেখো যোগাযোগ নীল পত্র পরে"।
করুণ তোমার নয়নে ছিল
অশ্রু মেশা হতাশা
হয়নি আজও পত্র লেখা
পাইনি খুঁজে ভাষা।
কি যে লিখি এতো যুগ পরে
ভেবেই হই আকুল
" তুমি চলে গেছো " এটুকু সত্যি
আর সব যেন ভুল।
যবে চলে গেছো, আমার প্রভাতে
ওঠেনি সূর্য আর
কি ভাবে বোঝাই শব্দে ছন্দে
আমি নই তো লিপিকার।
নানা কাজের ছলে আছিলে
তোমারে চেয়েছি ভুলতে
শিখে নিয়েছি তোমা বিনা
একা একা পথ চলতে।
কি যে লিখি নীল পত্রে
জমছে শুধু খুচরো ধূল
" তুমি চলে গেছো " এটুকু সত্যি
আর সব যেন ভুল।
বুকের গভীরে চাপা পড়ে আছে
পুরনো সব ব্যথা
পত্র কি ভাবে ব্যক্ত করবো
সেইসব সব স্মৃতি কথা।
দু'জনেই আজ দু'জনের কাছে
বিচ্ছিন্ন পথের যাত্রী
মান - অভিমানের দিন ফুড়িয়ে
নেমেছে নিশীথ রাত্রি।
কি যে লিখি কথা - মালার
সব শুকিয়েছে ফুল
" তুমি চলে গেছো " এটুকু সত্যি
আর সব যেন ভুল।
.
শালপাতাদের গান // সুব্রত মজুমদার
শালের বনে পাখির গানে
মত্ত মাতাল বাতাস হানে
বর্শা ভীষণ হায় !
জীর্ণ পাতা দুলিয়ে মাথা
মর্মরিয়ে জানায় ব্যাথা,
আজ সে ছুটি চায়।
গাছের কোলে কলরোলে
বুনো-টিয়া শাখায় দোলে
তর্ক জমায় ভারি ।
শালের তলে রাখাল ছেলে
ঝিমোয় বসে ছাগল ফেলে,
- খেয়ে তালের তাড়ি ।
জংলি মাছি যাচ্ছে নাচি
সুগন্ধে তার নাইকো রুচি
হোথায় পড়ে মরা বিড়ালছানা।
বনবিড়ালে ঐ আড়ালে
ঘুরছে পাখি ধরার তালে,
সঙ্গে দুটি ছানা।
এডাল হতে সেডাল হতে
ঝাঁপ দিচ্ছে কাঁড়সাপেতে
ধরতে টিয়ার ঝাঁক।
তন্দ্রা আসে নেশার বশে
রাখাল শুয়ে খুব আয়েশে
ডাকায় জোরে নাক।
ছাগলগুলি আওয়াজ তুলি
দূরের দিকে যাচ্ছে চলি
ধরে বনের পথ।
সূয্যি মামা সোনার জামা
চড়িয়ে গায়ে দিচ্ছে হামা,
ঐ যে স্বর্ণরথ।
বালিহাঁসে দূর আকাশে
কলকলিয়ে উর্ধ্বশ্বাসে
ছুটছে দলে দলে।
কঠবেড়ালী পুচ্ছতুলি
পাত-বাদামে পড়ছে ঢলি
কেবল খেলার ছলে।
বন-শুয়োরে আসছে তেড়ে
উর্ধ্বশ্বাসে রাখাল দৌড়ে
টুটল নেশার ঝোঁক;
মচমচিয়ে মর্মরিয়ে
শালের পাতা দেয় মাড়িয়ে
এমন কঠিন রোখ, - -
মর্মধ্বনি ঐ তো শুনি
শালের পাতার মচমচানি
যেন করুন গীত।
মাঘের শীতে আচম্বিতে
এ যেন রে ধানভানিতে
গাওয়া শিবের গীত।
নড়ছে পাতা পড়ছে পাতা
বায়ুর ভারে ঝড়ছে পাতা,
মর্মব্যাথা শুনি।
শালের পাতার করুন ব্যাথার
উৎস ফুঁড়ে কথকতার
উঠছে করুণ ধ্বনি।।
.
.
নিরুপমা // মিজানুর রহমান মিজান
ধরাধাম জীবনে তুমি অন্যকে ঈর্ষা কর না
ঈর্ষায় অমূল্য এ মানব জীবনে বাড়ায় যন্ত্রণা।
যা ঘটাবে তাই ঘটবে অমূল্য বাণী
সে ঘটিবে তার ব্যঞ্জনায় শুনি।
ঘটে পটে রটাও তোমার অপূর্ব মহিমা
যা নও তুমি তা প্রচারে হয় না নিরুপমা।
মানুষ মানুষের তরে হও হৃদয়বান
এ যে স্রষ্টার অপূর্ব সৃষ্টির অমোঘ বিধান।
দু’জিনিষে মানুষের অন্তরে পায় পরমানন্দ
পরচর্চা পরনিন্দা ধর্মীয় নিষেধ নিরানন্দ।
সতেজ সচল পুন্যাত্বা রাখ সর্বক্ষণ
সাফল্যে ভরপুর তোমার মানব জীবন।
.
এপার ওপার // রণেশ রায়
জীবনের বিস্তৃতি এপার থেকে ওপারে
এপারে তার চলাচল সময়ের বৈঠা হাতে
ব্যাপারীর খেয়া ঘাটে কে যেন অপেক্ষায়
প্রবাহিত সে জীবন দিনে রাতে
নিশ্চয়তা অনিশ্চয়তার দোলায় দোলা খায়
ওপারে সে বসে বিস্মৃতির বালু তটে
অশরীরী সে বেঁচে থাকে বর্তমানের স্মৃতিতে
উঁকি মারে এ পারের জীবন প্রাঙ্গনে
ফিরতে চায় বিস্মৃতির চড়াই পেরিয়ে
অবগুণ্ঠিত অতীতের আনন্দ মেলায়
এপার ওপারের বাহু বন্ধনে
অন্ত মেলে এসে অনন্তের আঙিনায়।
.
বিবেচনা // মিজানুর রহমান মিজান
বন্ধুর প্রেমে মন মজাইয়া
কি করলাম পাই না ভাবিয়া
আমায় বানাইল দেওয়ানা।
প্রেমের পাঠশালাতে
ভর্তি হলাম যবে তাতে
লোভে মত্ত করে সাথে
পিছন ফিরে তাকাইল না।
এত পাষাণ হিয়া
আমার সকল নিয়া
গেল ত্যাজ্য করিয়া
পাপ পূণ্যের ধার ধারে না।
পাইয়া আশ্বাস
নিলাম নি:শ্বাস
করল সর্বনাশ
এ তোমার বিবেচনা।
.
অভিমানী // মিজানুর রহমান মিজান
অভিমান খেলা অভিনয়
কষ্টের জ্বালা দু:সময়
ভেঙ্গে ফুটো হৃদয়
অবিরাম ঝরে পানি।
ফুটিতে ফুলের কলি
শক্ত বাঁধ সাধিলী
পাষাণী তরে বলি
ফলোদয় নিকটে জানি।
আকাশ বড় মেঘলা
তুমি চলছ একেলা
আধাঁর কেটে রোদেলা
মহা সত্যের বাণী।
অনন্যা ছিলে প্রেয়সী
বাঁকা পথে সর্বনাশি
কষ্ট বাড়ে বেশি
কেমনে বুঝাই অভিমানী।
0 Comments