শুধু একটানা পাশ করে দম নিচ্ছি নাইনে


shrutisahitya.com

.


জন্মান্তরের গল্প  / /  অমিয় মল্লিক



জন্মান্তর! সে তো কবে থেকেই অবিগলিত,পাথর

হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতেই সেকি চিলচিৎকার--

ভেসে গেলো আকাশ, সশঙ্ক কম্পনে বিক্ষুব্ধ বাতাস


আমার কবিতা লেখা খাতায় তখন ঝিরঝিরে বৃষ্টি

বাকী জীবন বেঁচে থাকার জন্য ছুটছি, পৃথিবীই রসদ।


উদিত সূর্যের অস্তগামীতা যেন বিরল স্বপ্নের গা' ঘেঁষে

হৃদয়ে যেন দশগুণ স্রোতের রক্তলীলা রসালো ঘনত্বে

নিঃসঙ্গ অন্ধকার কেউ ভালবাসে না তবু আবেগ থাকে


জন্মান্তরের গল্পগুলো ইতিহাসের সত্যে বাঁচেনা ঠিক

কেবল শুভেচ্ছার শরীর বেজে ওঠে অব্যক্ত জলতরঙ্গে।


.

.

.আজও দ্বারকা তীরে //  সুব্রত মজুমদার 



[ বীরভূম ঝাড়খণ্ড সীমান্তের প্রাচীন মাল রাজাদের প্রচলিত কাহিনী অনুসারে]


অনেক বছর আগে শাল-মহুলের বনের ছায়ায় খেলত যখন বাঘে

ভেলাগাছের কচি পাতা রাঙত রৌদ্ররাগে।

সে অনেক বছর আগে।।

ছিল সে এক রাজা, দ্বারকানদীর স্বচ্ছ জলে স্নান করে তার মজা।

ছিল সে এক রাজা।।

আসল পাঠান ধেয়ে, মাল রাজা তো ছুটল তার বর্শা ধনুক নিয়ে।

আসল পাঠান ধেয়ে।।

লড়াই হল শুরু , ধনুক হাতে আদিবাসী স্মরল 'মারাংবুরু' ।

লড়াই হল শুরু।।

রক্তে বইল বান, শতেক আদিবাসীর খুনে পাঠান করল স্নান।

রক্তে বইল বান।।

'বাঁচাব সন্মান' , বলল রাজা - 'প্রাণের চেয়ে বড় মানের দাম।'

বাঁচাব সন্মান।।

দিল কুয়ায় ঝাঁপ, সঙ্গে রাণী রাজার কুমার বৃদ্ধ সে মা-বাপ।

দিল কুয়ায় ঝাঁপ।।

আজও দ্বারকা তীরে, মজা কুয়ায় শুনবে যেন কান্না ঘুরে মরে।

আজও দ্বারকা তীরে।।

আজও সবই আছে, রাজার বেড়া রাজার কুয়ো, - চিহ্ন অনেক গেছে।

আজও সবই আছে।।

কান্না শোনা যায়, কান পাতলে আজও তাদের কান্না শোনা যায়।

ব্যাকুল বাতাসে রোদন তাদের ফিরে ফিরে আসে যায়।

.

.

.

বিদ্যার দেবীকে // বিশ্বনাথ পাল




বিদ্যারদেবী তুমি জানে সব জনে
তবে কেন পাশ ফেল দিয়েছে জীবনে ।

বই খাতা বোঝা ভারি

মোবাইল খুব দরকারী

তাই তো পাই না তোমার থৈ ।

পড়া না পেরে বেঞ্চের পরে একঠ্যাং এ রই

খেলতে গিয়ে তোমার কথা যাই বেমালুম ভুলে

তাই বলে কি পাশ দেবে না রাখবে ফেলের দলে।

হেলার দাদা ফেলা আমি  কদর যে সব খানে

শুধু একটানা পাশ করে  দম নিচ্ছি নাইনে


.

.

.

কি তাজ্জব্ // সুব্রত মজুমদার



রাতের পরে দিন আসে

দিনের পরে রাত,

দূরের মাঠে আড্ডামারে চৌধুরীদের ছাত।

আমার কলম আজ গিয়েছে

ঘোষপুকুরের ধারে

আনবে ধরে রুই কাতলা মৃগেল বস্তা ভরে।

স্কুলের থেকে আসার পথে

চমকে দেখি চেয়ে

ওদিক হতে জেব্রাক্রসিং আসছে যেন ধেয়ে।

জলের কলে বালতি চলে

হোথায় মিটিং আজ,

সঙ্গে হবে ফ্যাশান প্যারেড আমি তো তার জাজ।

চায়ের দোকান জীবন দাদা

গোমড়া কেন মুখ ?

-"কেটলি গেছে নেমন্তন্য, ফেরেনি উজবুক।"

এসব দেখে ভির্মি খেয়ে

যেই পড়েছি ভুঁইয়ে

আমনি দেখি সকাল হলো জল বসেছে চায়ে'।

.

.

.

স্থবিরকবি // সীমা চক্রবর্তী 



 তুমি আর নয়তো কবি     


 মৃত্যু হয়েছে তোমার

 সুযোগ সন্ধানী সমাজের কাছে

 আত্মা বিকিয়েছ বার বার।


 হারিয়েছো তোমার কবি স্বত্তা

 তোষণ প্রিয় শাসকের হাতে

 ছলনার পেয়ালায় ডুবিয়ে মুখ

 বিচরণ করো নিষিদ্ধ রাতে।


 তোমার লেখনীতে থাকে না তো

 আর আশার বাণী

 উজ্জ্বল আখরে ঢালো নাতো

 আর উজ্জীবিত সঞ্জীবনি।


 তুমি লেখো না আর

 মুক্তির গান ভোরের শিশিরে

 তুমি চাপা পড়ে আছো

 ক্রুর বশ্যতার বিষাক্ত কবরে।


 মৃত তুমি, মৃত তোমার সৃষ্টি,

 তোমার কাব্য আজ

 প্রেমের বার্তাকে কলমের আঁচড়ে

 বানাও সন্ত্রাস বাজ।


 জয়গান ছেড়ে তোমার কলমে

 শুধুই তোষণের কালি

 তুমি বেপথু হয়েছো

 তোমার ঠিকানা স্বার্থ ভেজা গলি।


 আর পারো না ফোঁটাতে তুমি

 শুভ আলিঙ্গনের সুখ-ছবি

 বিবেক কে পিষে দুমড়ে মুচড়ে

 হয়েছো চির স্থবির কবি।


.

.

.



নেভেনা আগুন //বিকাশ দাস (বিল্টু )



বৃষ্টি যদি  ধুয়ে দিত অঙ্গারকে ,

তবে বুঝি অঙ্গার নিভতো ।


     এ অঙ্গার নীরবে দহন করে --

কত বৃষ্টি হল ;

কত জল হল  ;

তবুও

 ভূষি জ্বলে ---


দু - ফোটা তো জল ;

পারলো না থামাতে

বন্যা হয়ে আসে --

আর আগুন দাও দাও করে জ্বলে ।


বন্যার মাঝে একচিলতে ভূমির

জ্বলন্ত অগ্নি জ্বলেই চলছে

বিরামহীন --

.

.

.

বাংলা অনুবাদ // সুব্রত মজুমদার 



ভজ গোবিন্দম

শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য্য কৃত


ভজ গোবিন্দম ভজ গোবিন্দম

ভজ গোবিন্দম মূঢ়মতি।

পারে কি তরিতে জ্ঞানসম্পদে

এখনো বুঝিলি না চপলমতি ।


ত্যজ হে ত্বরাকরি ধনের তৃষা ভারি

বিলাস পরিহরি ভাব পূর্বেরগতি।

কি নিয়ে এসেছিলে কি তুমি নিয়ে গেলে

কিসের মায়াবলে এ হেন দূর্গতি ।


যুবতী স্তনযুগ নাভির সুষমা সব

দেখিয়ে কেন মর, ও যে বিকার সব,

সবই মেদ মাংসের পিণ্ড বলে জেনো

সকলই মায়া সকলই বিকৃতি।


জীবন যেন রে কমলপাতে জল

কালের দোলায় করিছে টলমল,

এ ধরা রোগ ক্ষুধা অহমিকা দিয়ে ভরা

দুঃখের সাগরে সতত বসতি।


যতদিন খেটেগেলি ততদিন ভাল হলি

জর্জর হলে দেহ না শুধায় কেহ দুটি।

শুধায় না কেউ আর কুশল সমাচার

মরিলে তুমি তবে হবে কার ক্ষতি ?


যতদিন শ্বাস রবে সবাই প্রশংসা গাবে

শ্বাস গত হলে পরে এ দেহ হবে মাটি।

মরিলে দেখে কায়া ভার্য্যা ছাড়ি মায়া

ভয়েতে পালাবে করিবে ভ্রূকুটি।


বাল্য খেলায় গেল তরুণবয়স প্রেমে

বৃদ্ধকাল এলো চিন্তা হলো ক্রমে,

পরমব্রহ্মের না নিলি মূঢ়

অন্তিমসময়ে ত্বরাবি কিমতি ?


কে তোমার পুত্র কেই বা প্রেয়সী, -

এ ঘোর সংসারে কোথা হতে আসি ?

হে ভ্রাতা মোর কে তুমি জগতে ? -

এ ভাবি মনের নাহিক স্হিতি ।


সৎসঙ্গে জাগে নিঃসঙ্গত্ব নিঃসঙ্গে নির্মোহত্ব

নির্মোহত্বে নিশ্চলত্ব নিশ্চলত্বে মোক্ষগতি।

১০

 রমণের বৃথা সুখ যৌবন গেলে আর

শুকাইলে জলভার হ্রদ পরিচয়ই সার।

কমিলে উপার্জন পরিজন ভাবে ভার

নিজেরে জানিলে আর বৃথা সংসার।

১১

ধন জন যৌবন না কর অহংকার

নিমেষেই হবে সব কালের অধিকার।

এ জগৎ মায়াময় ভাবি মায়া করো ক্ষয়

পরমব্রহ্মের চিন্তায় কর মন স্থিতি।

১২

দিন যায়  রাত আসে শীত যায় বসন্ত হাঁসে

কাল ক্রীড়া করে দেহে তবু আশা বাঁধে নিতিন।

১৩

কেন কর ভাবনা, ধন-দারা কে আপনা ?

কে তোর সঙ্গে যাবে ওরে মূঢ়মতি !

ত্রিজগতে কে আছে থাকবে তোমার কাছে, -

সঙ্গী পরমপদ ওরে ও চপলমতি।

১৪

জটাজুটধারী মুণ্ডিত যোগী লুঞ্ছিতকেশী গিরিবেশ রাগি

বহুরূবেশে ভ্রময়ে মূঢ় উদরের তরে হেন দুর্মতি ।

.

.

.

বিদায় কালি দা  //  রণেশ রায়



জীবন সংগ্রামে আমি তুমি মুখোমুখি

আজ তুমি জিতলে আমার হার

আর আমি জিতলে তোমার

একজনের জ্বলে ওঠা মানে

অন্যের নিভে যাওয়া

একজনের টিকে থাকা!

অন্যের তলিয়ে যাওয়া

ওরা বলে এটাই যে জীবন কালিদা,

বাঁচার সংগ্রাম!

একজনকে মেরে আরেকজন বাঁচে

সভ্য এ সমাজের নিয়ম এটা।


কিন্তু এমনতো হবার কথা নয়,

 তুমি আমি বন্ধু যে

তোমার প্রশ্বাসে আমার শ্বাস

আমার বাঁচনে তোমার বাঁচন

আর তুমি মরলে সে মরণে আমার মরণ,

তবে কেন এমন!

এমন তো হবার কথা ছিল না!

তুমি ক্লাসে প্রথম হলে সে জয় আমার

আমি খারাপ করলে বিমর্ষ তুমি

স্কুলে টিফিন খেতাম ভাগ করে

মনে পড়ে সেদিনের কথা?

একজন অপরের সুখ দুঃখের সাথী

আজ আমরা মুখোমুখি

তুমি টিকলে আমি নেই

আর আমি ভাসলে তুমি তলিয়ে যাও।

না: বিদায় তোমায় কালি দা

আমরা দুজনে একসঙ্গে বাঁচতে চাই।





Post a Comment

0 Comments