টুকিটাকি // ছোটবেলা - ১৬ // বন্য মাধব

shrutisahitya.com




গোটা পাঁচেক জলাশয় ছোটবেলায় একই সঙ্গে আমাদের ভয় আর সাহসের পরিচয় নিত। মেঠেপুকুর, জোড়াপুকুর, পাণিখাল, সুতি খাল, দীঘির পাড়, মামা ভাগিনার খাল আর স্বয়ং বিদ্যাধরী নদী। দিনেরবেলাও এদের পাশ দিয়ে একা একা যাওয়ার সাহস আমরা তখনও অর্জন করিনি।

এমনি দলে গেলেও মনে হতো কে যেন পিছন থেকে আসছে, চকিতে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতাম, সব ফাঁকা, কেউ কোথাও নেই। খোরোর সময় হলে হঠাৎ দেখতাম পাশ দিয়ে এককাঁড়ি কুটি ধুলো নিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। আমরা একে মেঠো ভূতের হাওয়া জানতাম। রাম নাম জপে সে বিপদ থেকে আমরা নিজেদের রক্ষা করতাম। রাতেও এনারা গমনাগমন করতো। হঠাৎ তাল গাছের ডেগোয় জোর আওয়াজ উঠতো, বোঝা যেত তেনারা যাচ্ছেন, রাম নাম জপতে মোটেও দেরি করতাম না।

মেঠেপুকুরটা ছিল আমাদের স্কুল মামা ভাগিনা ফ্রি প্রাইমারির পিছন দিকে। আমরা মাঝে মাঝে দলবেঁধে টিফিনের সময় মেঠোপুকুরের হাফপাকা, পাকা ডুমোকুল খেতে যেতাম, সাথে নুন থাকতো। গোলাকার ইয়াবড় পুকুরটার চারধারে বেশ চওড়া উঁচুপাড়, পাড়ে কুল, বাবলাসহ অন্যান্য গাছ, ছায়া ছায়া ভুতুড়ে পরিবেশ। ফাঁকা জায়গাগুলোতে নানান সব্জি সারা বছর চাষ হতো। এর একদিকে ছিল কবরখানা।

কিন্তু কবরখানা আমাদের কাছে ভয়ের কোন কারণ ছিল না, আমাদের বিশ্বাস ছিল জিন উপকারী ভূত, তারা দরকার পড়লে বিপদে পড়া মানুষকে কাঁধে করে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায়, মানুষের তারা কোন ক্ষতি করে না। খোরোর চাষের জন্যে এই পুকুর থেকে বড় কেঁড়ে করে আমরা ছোটরা জল তুলেছি, সেও দলে।

আর যেতাম সরস্বতী পুজোর নিরঞ্জনে, ১০নং, ৯ নং কুমড়োখালির যাবতীয় প্রতিমা এখানে নিয়ম মেনে নিরঞ্জন করা হতো। লোকে লোকারণ্য, আবিরমাখা, কাদামাখা। রাতে ভয়টা পেতাম বেশি। বাড়ি থেকে হঠাৎ দেখতাম মেঠেপুকুরে আগুনের গোলা, ভাঁটির মত, ভূতের চোখ। বাবা বলতো দূর ও কিছু না, আলেয়ার আলো। এতে আমাদের ভয় বিন্দুমাত্রও কমতো না।



(চলবে)

Post a Comment

0 Comments