চাঁদ ও পৃথিবীর মাঝখানে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বিচ্ছেদের ভিতর দিয়েই শক্তি কাজ করবার ক্ষেত্র পায়। চাঁদ ও পৃথিবীর মাঝখানে যে বিরহ আছে তারই অবকাশে পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রকে চাঁদ কথা কওয়ায়। স্ত্রী পুরুষের পরস্পরের মাঝে বিধাতা একটি দুরত্ব রেখে দিয়েছেন। এই দূরত্বের ফাঁকটাই কেবলই সেবায় ক্ষমায় বীর্যে সৌন্দর্যে কল্যাণে ভরে ওঠে ;  এইখানেই সীমায় অসীমে শুভদষ্টি। জৈবক্ষেত্রে প্রকৃতির অধিকারের মধ্যে মানুষের অনেক সষ্টি আছে, কিন্তু চিত্তক্ষেত্রে তার সৃষ্টির অন্ত নেই। চিত্তের মহাকাশ স্থল আসক্তির দ্বারা জমাট হয়ে না গেলে তবেই সেই সৃষ্টির কাজ সহজ হয়। দীপশিখাকে দুই হাতে আঁকড়ে ধরে যে মাতাল বেশি করে পেতে চায়, সে নিজেও পােড়ে, আলােটিকেও নিবিয়ে দেয়।  মুক্ত অবকাশের মধ্যে পুরুষ মুক্তিসাধনার যে মন্দির বহুদিনের তপস্যায় গেঁথে তুলেছে  পূজারিনী নারী সেইখানে প্রেমের প্রদীপ জলবার ভার পেল। সে কথা যদি সে ভুলে যায়, দেবতার নৈবেদ্যকে যদি সে মাংসের হাটে বেচতে কুণ্ঠিত না হয়, তা হলে মতের মর্মস্থানে যে অমরাবতী আছে তার পরাভব ঘটে; পুরুষ যায় প্রমত্ততার রসাতলে, আর নারীর হৃদয়ে যে রসের পাত্র আছে তা ভেঙে গিয়ে সে রস ধূলাকে পঙ্কিল করে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Post a Comment

0 Comments