.
ক্যামিলিয়া হেসে লুটিয়ে পড়ল । ওর হাসি আর থামেই না। যখন হাসি থামল তখন ক্যামিলিয়া একটা লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল," সত্যি, প্রতিভা আছে আপনার। আসলে জানেন কি এই চটুলতার যুগে অরিজিনাল জিনিস লোকে পছন্দ করে না। তা যাই হোক, যদি বেঁচে ফিরি তাহলে আপনার প্রথম কবিতার বই আমি পাব্লিস করব।"
.
আমি বললাম, "তাতো হবে, কিন্তু ডেকেছে কেন সেটা জানতে পারি কি ?"
"এমনই, গল্প করবো বলে। এখানে সবাই জ্ঞানীগুনী মানুষ, মনের খবর কেউ রাখে না। তোমাকে বিক্রমসমগ্র পড়তে দেখেই বুঝেছি তুমি আর যাই হোক এদের মতো নও। "
.
আমি বললাম," কিন্তু বিক্রমসমগ্র তো গোয়েন্দা কাহিনী, এতে কাব্যরস কোথায় ? "
ক্যামিলিয়া বিকারের তরলটা একটা টেস্টটিউবে ভরতে ভরতে বলল," তবুও কল্পনা তো, বাস্তব আরো কঠিন মশাই। "
.
একটা বর্ণহীন তরল টেস্টটিউবের লাল তরলে মেশাতেই একটা বিস্ফোরণ হল, ধোঁয়াতে ভরে গেল গোটা ঘর। ক্যামিলিয়া টাল সামলাতে না পেরে পেছন দিকে পড়ে যাবার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হল। আমি ছুটে গিয়ে ধরলাম ক্যামিলিয়াকে। সেই সাদা ধোঁয়ার ফাঁকে নজরে পড়ল তার অপাপবিদ্ধ দুটো চোখ, - সে চোখে যেন একরাশ ভালোবাসার স্বপ্ন খেলা করছে।
.
সময় বেশ ভালোই কাটছিল। আমরা একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছিলাম বৃহস্পতির দিকে। তখনকার বিজ্ঞান আজকের মতো এতটা উন্নত ছিল না।
.
কোন গতিশীল বস্তুই আলোর বেগের চেয়ে দ্রুত যেতে পারত না। তখন প্রচলিত ছিল সুপারসোনিক কথাটা। সুপারসোনিক মানে হল শব্দের চেয়েও দ্রুত। তাই আমাদের অভিযানের সময়কালটা ধরা হয়েছিল মোটামুটি ছয় বছর।
.
কিন্তু আমাদের টেকনোলজি সমকালীন টেকনোলজির চেয়ে উন্নত হওয়ায় সময় আরও কম লেগেছিল।
.
একদিন ক্যামিলিয়ার কান্নাকাটি শুনে ওর ল্যাবে গিয়ে দেখি গ্রাম্য কিশোরীর মতো ল্যাবের মেঝেতে বসে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদছে। আমি কাছে যেতেই কান্নার বেগ বেড়ে গেল। আমি ঠাট্টা করে জিজ্ঞাসা করলাম, "কি হল খুকী কাঁদছ কেন ? মা মেরেছে ?"
.
ক্যামিলিয়া কান্নার বেগ আরো বাড়িয়ে একটা বিকার এর দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলল, "আ.. আমার চালকোমিক দ্রবণ... উঁ.. উউউ..."
.
বিকারটার দিকে তাকাতেই আমার মেরুদন্ডের মধ্যদিয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল। বিকারের ভেতরের তরলটা সাদা জমাট একটা পিণ্ডের আকার নিয়েছে। আর তার মাঝখানে একটা গিনিপিগ অর্ধেকটা আটকে আছে। সারা বিকার হতে কালোরঙের ধোঁয়ার মতো আলো নির্গত হচ্ছে।
.
" ও মাই গড ! অ্যান্টিম্যাটার !!" আমিও বিস্ময় আর আতঙ্কে বসে পড়লাম ল্যাবের মেঝেতে ক্যামিলিয়ার পাশেই। ক্যামিলিয়ার কান্না থেমে গেছে। সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, - তার চোখেও আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।
.
ক্যামিলিয়া এবার মুখ খুলল। "কিন্তু অ্যান্টিম্যাটার নিয়ে তো গবেষণা করছেন ডঃ ওরেন রোদেনস্টাইন, আমার ল্যাবে অ্যান্টিম্যাটার আসে কিভাবে ! আর অ্যান্টিম্যাটার তো থিয়োরি মাত্র।"
.
আমি বললাম, "সবাইকে ডাকা উচিত। আমার আশঙ্কা যদি সত্যি হয় তবে খুবই চিন্তার ব্যাপার।"
.
ভিডিও কনফারেন্স মারফত সকলকে খবর দেওয়া হল। ক্যাপ্টেন এসে বিজ্ঞের মতো একটা ভাব দেখালো, তারপর ওরেনকে বলল," খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আপনার ? কোম্পানি আপনাকে প্ল্যানচেট করার জন্য এই মহাকাশযানে আনেনি। একে ম্যাটারে রক্ষা হয় না আবার অ্যান্টি ম্যাটার ! টিড্ডি....."
টিড্ডি আমাদের মহাকাশযানের রোবোকপ। ক্যাপ্টেনের ডাক শুনে সে একটা বড়সড় স্যালুট দিয়ে বলল, "ইয়েস স্যার !"
.
" সবার রুমে তল্লাশি কর, গাঁজা চরস ড্রাগ কিচ্ছু যেন না থাকে। সিজ অ্যান্ড ফ্লাশ ! " এই বলে বিকারটা নিয়ে অটোফ্লাশ মেশিনের কাছে নিয়ে যেতে উদ্যত হতেই অঘটনটা ঘটল। একটা তীব্র আর্তনাদ করে মেঝেতে পড়ে গেলেন ক্যাপ্টেন।
.
হাতের বিকারটা মেঝেতে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। আর বিকার হতে বেরিয়ে এল একটা থকথকে জেলি জাতীয় জিনিস। জেলিটার সারা গা হতে কালো রশ্মি বিকিরণ হচ্ছে। জেলিটা সচল হয়ে উঠল। তারপর এগিয়ে আসতে লাগলো ক্যাপ্টেনের দিকে।
.
ক্যাপ্টেনের হাতের উপর চেপে বসল জেলিটা। সঙ্গে সঙ্গে ক্যাপ্টেনের দেহটা দুমড়ে মুচড়ে যেতে লাগল। আর মিনিট খানেকের ভেতরে ক্যাপ্টেনের দেহ হতে ওই জেলিটার মতোই আরেকটা জেলি বেরিয়ে এল, আর সঙ্গে সঙ্গে ক্যাপ্টেনের দেহটা একটা বিকটাকার জন্তুর মতো হয়ে গেল। জন্তুটার কপালে চারটে চোখ, মাথায় দুটো লুমিনাস সিং আর দেহটা দগদগে পূতিমাংসে পরিপূর্ণ। এককথায় নরক থেকে উঠে এসেছে যেন।
.
- - চার--
.
সেদিন ওই জন্তুটাকে অনেক কষ্টে ল্যাবরেটরি রুমে আটকে দিয়ে আমরা জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলাম। রুমটাকে এয়ারটাইট করে দিয়ে সিসিটিভি সারভিল্যান্সে রাখা হয়েছে। গোটা মহাকাশযানটিকে জীবাণুনিরোধক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। তবুও মনের ভেতর থেকে আতঙ্ক যায়নি।
.
... চলবে
.
.
.
0 Comments