হে প্রিয়া // সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
ক্ষমো মোরে হে প্রিয়া
মম যাত্রাপথে,
বিভেদ ভুলে অসীম নক্ষত্রালোকে
এস এ জগতে।।
চাই না বিবাদ চাইনা বিচ্ছেদ
চাই পরম বিশ্বাস
লজ্জা শরম দূরে থাক
চাইনা মিথ্যে পরিহাস।
দীপ জ্বালো সন্ধ্যা হলো
থেমেছে পাখির গান
মৃত্যু করে আবাহন দিন আজি সমাপন
সবকিছু হোক অবসান।
বন্ধু ভেবে অদৃষ্টেরে কাছে ডেকে
কোরোনা হাহুতাশ
পুরোনো যাকিছু, ত্যজি এসো পিছু পিছু
পুনঃ দাও জীবনের আশ্বাস।।
হে সুন্দর, হে স্মৃতি বন্ধ কর পুরোনো গীতি
শোন মোর আকুল আহ্বান
ধ্বংস নয়, দুঃখ নয় দাঁড়াও খানিক স্থির
সৌরভে ভরাও পরাণ।
তোমার অপমানে আমিও ব্যথিত প্রাণে
মুছে যাক সব ব্যবধান
নতুন প্রভাতে দেখা হবে নদীতটে
শুনব পুনঃ মধুর কলতান।।
.
.
অনন্যা // শ্যামল কুমার রায়
তুমি অনন্যা!
তোমার সাথে অন্য কারোর তুলনা হয় না।
সবাই যখন আঘাত করে পুলকিত হয়-
তুমি তখন আঘাত করেও বেদনাহত হও!
সবাই যখন চলার পথে অঘটনই চায়-
তুমি তখন ফেরার পথে অপেক্ষাতেই রও।
সবাই যখন উন্নতিতে চরম ঈর্ষান্বিত
তুমি তখন বিপদ ভেবে সদা শঙ্কিত ।
সবাই যখন গুছিয়ে নিতে সদা তৎপর
তুমি তখন সাজিয়ে দিতে ভুলেছো আপন পর।
ব্যবহার করে বাগিয়ে নিতে ধান্দাবাজের ভিড়
তুমি তখন তফাত বাড়াতে ভীষণ অস্থির।
সবাই যখন ঝামেলা করে বেশ ফুরফুরে
তোমার কেন ঝামেলা করে আঁখি জল ভরে ?
সবাই যখন তোষামোদে শশব্যস্ত
তুমি তখন ভুল ধরতে করো না ইতস্তত।
তুমি যখন অভিমানী , কও না কোনো কথা,
শুধু তোমার মান ভাঙাতেই থাকে কারকতা।
তোমার মত দ্বিতীয় কেউ খুঁজে পাওয়া ভার!
অনন্যা থাকতে আর কিসের দরকার ?
.
.
.
পরমাণু কবিতা
ব্রহ্ম // শ্যামল কুমার রায়
তোমাতেই শুরু, তোমাতেই শেষ, তুমি ছাড়া ব্যর্থ পরিশেষ ।
.
.
লিপিকা // সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
রোজই রাত শেষে সকাল।
কে যেন চলে যায়
অপেক্ষা করে না।
বিছানায় ঘুমিয়েছিল নীরব কপাল
সূর্য উঠল
নক্ষত্ররা মুখ লুকোলো!
দেখলাম
আবার সেই ঘণ অন্ধকার
নতুন নাম নিয়ে এসেছে
সমাজ তারিখ বদলে গেছে শুধু
কাছে এগিয়ে এসে যে
শুষে নিতে চায় বিষ, যত প্রেম
যত হারানো স্মৃতি।
দীনভিখারীর বেশে আমি দাঁড়ালাম পদতলে
তুমি কী দেবে? কী দিতে পারো আমায় সেসময়
শুধু একগুচ্ছ কবিতা ছাড়া---
লিপিকা!!!!
.
.
.
ভালোবেসে সই মরেছি অনেক আগে
সুব্রত মজুমদার
ভালোবেসে সই মরেছি অনেক আগে,
আবার মরার সাধ যে হৃদয়ে জাগে।
আলোছায়া ঘেরা বনপথে যেতে যেতে
হাত রেখেছিনু তোমার ও দুটি হাতে, -
মুখ ঢেকেছিল রক্তরবির রাগে।
চোখে চোখ রেখে অনেক হল যে কথা
পায়ে পায়ে হল অনেক পথ তো হাঁটা ;
বিবাগী পরাণে প্রেমের মুকুল জাগে।
আরো পথ আরো কত পথ পার হয়ে
ভেঁসে যাবো মোরা প্রেমের সরণি বেয়ে,
দুই চোখে তাই প্রেমের আবেশ জাগে।
তোমার ঠোঁটের ভীরু কাঁপুনিতে ওগো
পড়েছি যে লিপি সেই স্বরলিপি কিগো -
আজ দুজনার মনগুঞ্জনে জাগে ?
ভালোবেসে সই মরেছি অনেক আগে।
.
.
.
ভাবিনি // সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
কোথা ছিলে এতদিন?
কেন-ই বা এলে?
আমি তো একাদশীর একফালি চাঁদ
যাকে তুমি একদিন ঘরের মধ্যে
অন্তরের বিছানায়
পূর্ণ চাঁদের জোছনায় স্নান করিয়ে
স্বর্গের আনন্দ দিতে চেয়েছিলে!
আজ পড়ে আছি এক কোনে নিরালায়
কে আমায় দেখবে
কে-ই বা ডাকবে
ছোট্ট কচি শিশুটা হয়ত বলবে----
"চাঁদা মামা, চাঁদা মামা আয় কপালে টু"---
আসন নড়ে গেছে
আমি চলে যাচ্ছি
তুমি ঘুমোও। আমাকে তো দরকার নেই
জানলা খোলা আছে
পারলে এসো একদিন
স্বরে, শাসনে সেদিন ভাগ করে নেব দু'জনে
অখণ্ড প্রণয়
আরেকটা // সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
আরেকটা যৌবন তবে কি ফিরে ফিরে এল
শরীরে শিহরণ লাগল
মেয়েটা যেন যুবতী হয়ে ধরা দিল কাছে
আমি অবাক মনে তাকিয়ে আছি---
এর'ম সত্যি যদি হয়
আস্তে আস্তে স্বপ্ন মিলিয়ে গেল
কোথায় কে? কেউ তো নেই
যৌবন তবে কি ফিরে আসতে চায়
ফিরে এল নতুন আরেক চিন্তা
প্রেমালিঙ্গন // সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
এক তরুণীকে যখন প্রকাশ্যে
কাম- চৈতন্যে অব্যর্থ, অমোঘ অনিবার্য
শরীরের আদিম আহ্বানে
আলিঙ্গন করলো কোনো তরুণ
সেটা কি প্রণয়ের নবনির্মাণ ?
নারীর বক্ষযুগল গুজে যায় অচিরেই
তরুনের মুখগহ্বরের আহ্বানে।
এটা কি সভ্যতার বৈদগ্ধ্য অভিজ্ঞান?
নাকি পবিত্র প্রণব!
এ কোন্ বাংলা? এ কেমন
সুসভ্য হিতৈষী সমাজের আদর !!
এটা কি আর্তবক্ষয় নয়?
নাকি অচৈতন্য তরুণীর নেতিয়ে পড়া
শরীরকে চেটে পুটে লুটে নেওয়া
শতাব্দীর লজ্জা!!
আলিঙ্গন-- ফুলের মতো পবিত্র সোহাগ সরণী
যেথায়' শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে' এক মঙ্গল ইচ্ছা
অনাদরে নয় বিষণ্ণতায় নয় অতি আদরে
প্রেম হোক সহিষ্ণু
প্রেম হোক জয়ী.....
ফিরিয়ে দাও // সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
ফিরিয়ে দাও, স্মিতা, ফিরিয়ে দাও, যতটা পার--
ফিরিয়ে দাও আমার ভালবাসা
আমার যৌবনের হাসি
আমার বৃষ্টিভেজা মন , সোনালী বিকেল
পাপড়ি মেলা সুখের সান্ত্বনা
উন্মত্ত পিপাসায় মাঠভর্তি রোদ্দুর।
ফিরিয়ে দাও। যৌবনটা যেহেতু তোমার কোনো কাজে আসেনি, যেহেতু সে তোমাকে স্বপ্ন দেখাতে
পারেনি, শিউলির গন্ধে ভরেনি প্রাণ।
কোনো লাভ ক্ষতির হিসাব চাইনা
স্মিতা, শুধু---
ফিরিয়ে দাও যৌবন, তরঙ্গে যে
হয়নি ভুলুণ্ঠিত আজোও
দুঃখের সাগরে যে আজোও অমলিন
ফিরিয়ে দাও আমার স্মৃতি, অদ্ভুত রোমাঞ্চ
আর পুরানো সেই যৌবন----
তুমি // সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
তোমার কাছে গেলেই আমি কেমন হয়ে যাই
কিন্তু তুমি কি আমার মতো হতে পেরেছ কোনো দিনও
যে তোমাকে -আমাকে মিলন সুধায় ভরিয়ে দেবে?
অনেকেই বলে তোমার রূপ ছিল না-আজোও নেই
তুমি আমার যোগ্য নও।
তবু তোমাকে নিয়েই আমার স্বপ্ন আর
স্মৃতির মধ্যে বেঁচে থাকা।
জানিনা, বোঝাতে পেরেছি কিনা
তাই অবুঝ মন
হৃদয়ে হত্যা করেছে প্রত্যাশাকে
প্রেমের বদলে ঘৃণাকে
স্মৃতির দরজায় কান্নাকে।
বলতে পারিনা, আমাকে বোকা পেয়ে
তুমি কী না করেছো !!
কেউ পড়ে নাকো কবিতা আমার
সুব্রত মজুমদার
কেউ পড়ে নাকো কবিতা আমার
লিখে চলি আপন খেয়ালে;
হাতে বানানো ধূপকাঠির মতো পড়ে থাকে এককোণে,
মোটরগাড়ি - সাদাহাতি আর নীলপরী ছাপগুলো
বিক্রি হয় সোনার সিক্কায়।
আফগানে এক রাজা ছিলেন - 'বাচ্চা-ই-সিক্কা' , -
পয়সার বেটা বলে কথা !
তার মতো হলে লিখতে হবে না,
এমনিই পড়বে সবাই।
তাই তো লিখিনা ফুলেদের গান
তাই তো জাগে না পাতার উপর শিশিরের গান।
যৌনতা হতে ধর্ম সবকিছুই আজ যান্ত্রিক,
ইলুমিনাতি আর বামাচারের জগমচ্ছবে
আমরা আজ ভগবানের দর্শন পাই।
আর কিছু শতক পরে হয়তো থাকবে না কোন কবি,
কবিতা হবে মিউজিয়ামের শোকেসে বন্ধ,
সেদিন যদি আবার কোন জন্ম হয়, - আবার আসি ফিরে
সেদিন গাইবো গান।
সুর তুলেছি হৃদয় বীণায় আয় রে চলে।
- জগৎ ঘেরা স্থবিরতায় ভাঙব বলে।।
উঠানে// মিজানুর রহমান মিজান
উঠানে দাড়িয়ে বালা মোবাইল ফোনে কথা কয়
কত ঢঙ্গে অঙ্গ দোলায় বুঝি মনে ফাগুন বয়।
মাথা আউলা লাগে বাউলা রসের আলাপনে
খেয়াল নেই তার ভাবছে কি অপর জনে
প্রেমালাপে মত্ত রয়।
মাথা খোলা হাতে নেই বালা
হাত ঘুরিয়ে চপল পায়ে চিকন গলা
কথায় ফুটে খৈ উচছ¦াস অতিশয়।
যৌবন জ্বালা ডাকে কালা আস কাছে
বিলম্ব সয় না জলদি করনা আনুগত্য যাচে
জোয়ারে প্লাবিত হয়।
ভালবাসার নদী উজান যদি চলে
কুলমান ছেড়ে নিন্দার দৌড়ে বলে
পাগলপারা ভালবাসার নেই ক্ষয়।
মন ভূলাতে // সুব্রত মজুমদার
অধর তোমার কোন লালিমায় লাল হল ?
প্রথম চুমু দেওয়াই কি মোর কাল হল !
জানলে আগে লাজের ঘটা
কইত কে আর প্রেমের কথা ;
তোমার লাজের লালিমাতে অস্তরবি লাল হল।
খোঁপার ঘ্রাণে মিথ্যে আমায় বশ করো,
মন ভূলাতে মিথ্যে আমার যশকরো,
কাজল কালো চোখের তারা
করলো আমায় তন্দ্রাহারা ;
রাত্রি জেগে তাকিয়ে রই, - তাও মেটে কি আশ কারো ?
যাচ্ছ তুমি আলতা পায়ের ছাপ ফেলে
পায়ের নূপুর বাজছে মধুর সুর তুলে।
দূর্বাঘাসে জলের কণা
যাচ্ছে নাকো মাণিক গণা
হেমন্ত আজ এল যেন পথ ভূলে।
নীলাম্বরীর নীল মিশেছে রক্তরবির লাল ঠোঁটে
বক্ষবাঁধন ভেদ করে তাই অচল নগের বাঁধ টুটে।
পদ্মিনী লো তোর 'বাসে
মন মধুকর ওই আসে,
গুঞ্জনে তার বিভোর হয়ে কমলিনীর ঘুমছুটে।
0 Comments