বরাহ গ্রহের আলো // ১০ // সুব্রত মজুমদার

বরাহ গ্রহের আলো // ১০ // সুব্রত মজুমদার

.

অনেক জেরা করার পরেও ডঃ রোদেনস্টাইন একবারের জন্যেও মুখ খোলেননি। মাঝে মাঝে অকারণে হেসে ওঠা ছাড়া আর কোনও ভাবান্তর তার মধ্যে নেই। ক্যামিলিয়াও ঠিকঠাক বলতে পারছে না সেদিন কি ঘটেছিল।

.

তার বয়ান অনুসারে ঘটনাটা মোটামুটি এই। চালকোমিক দ্রবণ নিয়ে গবেষণা করছিল ক্যামিলিয়া। সেদিন হঠাৎ করে   একটা মিষ্টি গন্ধ  পেয়ে  গন্ধের উৎস সন্ধান করতে করতে ল্যাবের বাইরে চলে আসে সে।

.

.

বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে গন্ধটা ডঃ রোদেনস্টাইনের রুম হতে আসছে। ডঃ রোদেনস্টাইনের  রুমের দরজা নক করতেই যাচ্ছিল ক্যামিলিয়া, কিন্তু গন্ধটা হঠাৎ করেই ভ্যানিশ হয়ে যায়।  ডঃ রোদেনস্টাইনকে ঘাটাবার সাহস আর হয়নি ক্যামিলিয়ার। এরপর ল্যাবে ফিরে এসেই দেখে সেই বিচিত্র ঘটনা।


.

       সর্বসন্মতিক্রমে বাও ঝাও কে ক্যাপ্টেন নির্বাচিত করা হল। বাও একজন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার। এছাড়াও অ্যাভিয়েশনের উপর তার ভালোমতো ডিগ্রীও আছে। বাও খুব সহজ সরল মানুষ। আর খুব সহজেই হতাশ হয়ে যায়। ক্যাপ্টেন হবার পর তার প্রতিক্রিয়া খুব একটা সন্তোষজনক ছিল না। কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীর মতো মুখ করে সে বলেছিলেন , "আমি পারবো তো ! এসব দেখার পর আমার আর সাহসে কুলোচ্ছে না। আমি জল খাবো।"


.

আমি এক গ্লাস জল এনে নতুন ক্যাপ্টেনের হাতে দিলাম। এরপর ক্যাপ্টেন ঝাও বললেন , "ওই ল্যাবরেটরির দিকে কেউ যাবে না। আমার হুকুম।"

.

আমরা বৃহস্পতি আর মঙ্গলের মাঝের অ্যাস্টরয়েড বেল্টের মধ্যে এসে পড়েছি। বিভিন্ন মাপেরঅসংখ্যঅ্যাস্টরয়েড চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনোটার আকার মার্বেলের মতো তো আবার কোনোটা আকারে বিশাল। এই অ্যাস্টরয়েড বেল্টের অ্যাস্টরয়েডগুলোর মোট ভর চাঁদের ৪%  এবং প্লুটোর ভরের ২২%।

.


মহাকাশযানের চারজন মাত্র সদস্য মহাকাশযান চালানোর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারমধ্যে আগের ক্যাপ্টেন এখন ল্যাবরেটরি রুমে তালাবন্দি। বাকি তিনজন মিলেও যখন মহাকাশযানকে নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে তখনই ঘটল সেই অনাকাঙ্খিত ঘটনা।

.


একটা বিশেষ প্রয়োজনে ডঃ রোদেনস্টাইনকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন। কিন্তু ডঃ রোদেনস্টাইনের কোনো উত্তর তিনি পেলেন না। টিড্ডিও গোটা মহাকাশযান তন্ন তন্ন করে খুঁজেও রোদেনস্টাইনকে পেল না। একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হল মহাকাশযানের ভেতরে।

.

কয়েক ঘণ্টা পরে যখন ব্যাপারটা থিতিয়ে এসেছে ঠিক তখনই কসমোলজিস্ট সুশানা দৌড়তে দৌড়তে হলঘরে এল। আমরা দু'তিনজন তখন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছিলাম। সুশানা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল, "ডঃ রোদেনস্টাইনকে দেখলাম।"

আমরা একযোগে বলে উঠলাম, "কোথায় ?"

সুশানা কম্পিত গলায় উত্তর দিল, "ল্যাবরেটরি রুমে..."

.


ক্যাপ্টেন অবাক হয়ে বললেন, "কি উল্টোপাল্টা বলছ তুমি ! ল্যাবরেটরি রুম তো সিল করে দেওয়া হয়েছে। ওখানে একটা মাছিও ঢুকতে পারবে না।"

সুশানা বলল, "আমার কথা বিশ্বাস না হলে আমার সঙ্গে চলুন।"

আমরা সুশানার সঙ্গে ল্যাবরেটরির দিকে ছুটে গেলাম। আমাদের মানসিক অবস্থা সেসময় যে কি ছিল তা বলে বোঝাতে পারবো না।


.

যখন ল্যাবরেটরি রুমের সামনে এসে পৌঁছলাম তখন আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। মানসিক চাপ আর উদ্বেগে কিছুই মাথায় ঢুকছে না। এ অবস্থায় সুশানা ল্যাবরেটরির দরজার দিকে আঙুল উঁচিয়ে যা দেখালো তা আমি কোনো দিনও ভুলতে পারবো না। দেখলাম ল্যাবরেটরির দরজাটা হাট করে খোলা। আর ভেতরে দু'খানা জেলির সাথে খেলা করছেন ডঃ রোদেনস্টাইন।

.


তার মুখাবয়বে একটা ক্রূর হাঁসি ফুটে উঠেছে। জেলিগুলো হতে নির্গত কালো রশ্মির বিকিরণ ল্যাবরেটরির দেওয়ালে তৈরি করেছে একটা ওয়ার্মহোল, আর সেই ওয়ার্মহোল কৃষ্ণগহ্বরের মতো অতিপ্রাকৃতিক শক্তিতে আকর্ষণ করছে আমাদের। আমরা আর সেই টাধকে উপেক্ষা করতে পারছি না। আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছি সেই সর্বগ্রাসী অনিশ্চিতের দিকে। অন্ধকার গহ্বরে ঢুকে পড়েছি, এগিয়ে যাচ্ছি বিদ্যুৎগতিতে।

.


কত আলো ! কত আলো ! নেই কোনো অন্ধকার, নেই কোনো গোপনীয়তা। দুঃখ শোক বেদনা হতাশাকে পেরিয়ে এসে পড়েছি এক চির শাশ্বতলোকে। শুধু আলো আর শুধু আলো ! একি মৃত্যুর অনির্বচনীয় রুপ নাকি জ্ঞানের আনির্বাণ শিখা ? এই আলোকের ঝর্ণাধারায় আমি ভেসে যেতে চাই, আমি ডুবে যেতে চাই.......


.


[ সুপ্রিয় পাঠক ! গল্প এখানেই শেষ নয়, তবুও আমি দীর্ঘায়িত করলাম না। আপনাদের যদি ভালো লাগে পরের অংশ অবশ্যই কোনোদিন শোনাবো।]


.

.

.

Post a Comment

0 Comments